বাচ্চাদের কোন ডিম খাওয়ানো ভাল - বাচ্চাদের ডিম খাওয়ার নিয়ম? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য বাচ্চাদের কোন ডিম খাওয়ানো ভাল তাদের শরীরের। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে বাচ্চাদের ডিম খাওয়ার নিয়ম কি ও কিভাবে ডিম খাওয়ানো উচিত। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

আমাদের জীবনে যখন কোনো শিশু আসে। তখন আমরা তাদের শরীর নিয়ে খুবই যত্নবান হয়ে থাকি। তারা কি খাবে কি পড়বে সেটি নিয়ে খুবই কেয়ার করি। কেননা একটা শিশু ছোটকালে কোনো কিছু বলতে পারে না। যে তার কি লাগবে কি খাবে কিছুই বলতে পারে না।

তাই আসুন জেনে রাখি যে, বাচ্চাদের শরীর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য ও শরীরের প্রোটিনের জন্য বাচ্চাদের কোন ডিম খাওয়ানো ভাল হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে বাচ্চাদের ডিম খাওয়ার নিয়ম কি ও কিভাবে ডিম খাওয়াতে হয়। নিম্নে বিস্তারিত.........।

বাচ্চাদের কোন ডিম খাওয়ানো ভালঃ

বাচ্চাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো দেশি মুরগির ডিম, কারণ এতে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টিগুণ থাকে। মুরগির ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ই, বি-কমপ্লেক্স, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা বাচ্চার হাড়, দাঁত, চোখ, মস্তিষ্ক ও রক্তের জন্য উপকারী। বিশেষ করে দেশি মুরগির ডিম বাচ্চাদের জন্য আরও ভালো, কারণ এতে পুষ্টিগুণ তুলনামূলক বেশি এবং হজমও সহজ হয়।

এ ছাড়া আপনি চাইলেও হাঁসের ডিম খাওয়াতে পারেন। হাঁসের ডিমে পুষ্টির পরিমাণ বেশি থাকে। তবে শিশুর বয়স ৬-৮ মাসের পর থেকে অল্প পরিমাণে ডিম খাওয়ানো উচিত সেদ্ধ ডিমের কুসুম। ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সাদা অংশও দিতে পারেন। হাঁসের ডিম বা কোয়েলের ডিমও খাওয়ানো যায়, তবে সেগুলো শক্ত ও হজমে তুলনামূলক কঠিন হওয়ায় ছোট বাচ্চাদের জন্য মুরগির ডিমই সবচেয়ে নিরাপদ ও উপকারী ডাক্তারদের মতে।

বাচ্চাদের ডিম খাওয়ার নিয়মঃ

বাচ্চাদের ডিম খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বয়স ও হজম ক্ষমতা অনুযায়ী নিয়ম মেনে খাওয়ানো জরুরি। সাধারণত শিশুর বয়স ৬-৮ মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে ডিম খাওয়ানো উচিত। শুরুতে পুরো ডিম নয়, শুধু ভালোভাবে সেদ্ধ করা কুসুমের সামান্য অংশ শিশুকে দিবেন। কারণ কুসুম সহজে হজম হয় এবং এতে প্রচুর পুষ্টিগুণ থাকে। এক বছর বয়সের পর ধীরে ধীরে ডিমের সাদা অংশ খাওয়ানো যেতে পারে শিশূকে।

তবে অবশ্যই ভালোভাবে সেদ্ধ হতে হবে যাতে কোনো জীবাণু না থাকে। ছোট বাচ্চাদের ডিম ভাজি, অমলেট বা কাঁচা ডিম দেওয়া উচিত নয়, এতে হজমের সমস্যা ও অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকতে পারে। প্রতিদিন একটি ডিমই যথেষ্ট, তবে বয়স ও স্বাস্থ্য অনুযায়ী সপ্তাহে ৩–৪ বারও খাওয়াতে পারেন। মনে রাখতে হবে, নতুন খাবার শুরু করার সময় অল্প অল্প করে দিয়ে শিশুর খাওয়ার হার পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

এভাবে নিয়ম মেনে খাওয়ালে ডিম বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তার সাথে একটা কথা মনে রাখবেন যে ডিম দ্বারা শিশু যেন এল্যার্জির শিকার না হয়। এল্যার্জির ভাব মনে হলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

বাচ্চাদের প্রতিদিন ডিম খাওয়ালে কি হয়ঃ

বাচ্চাদের কোন ডিম খাওয়ানো ভাল সেটি আমরা উপরের তথ্য থেকে জেনেছি। তাই জন্য বাচ্চাদের প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়ানো তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত উপকারী হিসাবে গণনা করেছেন ডাক্তারেরা। ডিমে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎস, যা শিশুর হাড়, দাঁত, চোখ ও মস্তিষ্কের সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ডিম খেলে বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে তারা সহজে অসুস্থ হয় না। 

ডিমের প্রোটিন শরীরে শক্তি জোগায় এবং পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, যা বাচ্চাদের ক্ষুধা মেটাতে ও পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়ক। এছাড়া ডিমে থাকা ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম রোগ প্রতিরোধ শোষণে সাহায্য করে, যা হাড় ও দাঁত মজবুত করে। তবে প্রতিদিন ডিম খাওয়ানোর সময় অবশ্যই সেদ্ধ ডিম দেওয়া উচিত এবং ১ বছর বয়স অনুযায়ী তাদেরকে ডিমের পুরো অংশ দিতে পারবেন। নিয়মিত ডিম খেলে বাচ্চারা সুস্থ, সবল ও বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে থাকে।

কত মাস থেকে বাচ্চাকে ডিম খাওয়ানো উচিতঃ

বাচ্চাদের কোন ডিম খাওয়ানো ভাল ও কয় মাসে খাওয়ানো উচিত বাচ্চাকে ডিম। সাধারণত শিশুর বয়স ৬-৮ মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে ডিম খাওয়ানো যেতে পারে। তবে শুরুতে পুরো ডিম নয়, শুধু ভালোভাবে সেদ্ধ করা কুসুমের অল্প অংশ দেওয়া উচিত, কারণ এটি সহজে হজম হয় এবং পুষ্টিকর। এক বছরের আগে ডিমের সাদা অংশ না দেওয়াই ভালো।

কারণ এতে অ্যালার্জির ঝুঁকি বেশি থাকে। যখন শিশুর বয়স ১ বছর পূর্ণ হয়, তখন থেকে ধীরে ধীরে ডিমের সাদা অংশও খাওয়ানো যেতে পারে। সবসময় ডিম সম্পূর্ণ সিদ্ধ করে খাওয়াতে হবে, যেন কোনো জীবাণু না থাকে। প্রথমবার ডিম খাওয়ানোর সময় অল্প পরিমাণে দিয়ে শিশুর শরীরে অ্যালার্জি বা হজম সমস্যার লক্ষণ দেখা দেয় কি"না তা খেয়াল রাখতে হবে মা ও বাবাকে।

আপনার শিশুকে ৬ মাস পর হলে অল্প অল্প করে ডিম খাওয়াতে পারবেন। শিশুকে সঠিক বয়স ও নিয়ম মেনে ডিম খাওয়ালে এটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ডিম খাওয়ার সঠিক সময় কখনঃ

ডিম খাওয়ার সঠিক সময় নেই বলেই চলে। তবে আপনি চাইলে ডিম খাওয়ার সঠিক সময় মানুষ সকালে নাশতায় বা দুপুরের খাবারের সঙ্গে খেতে পছন্দ করে। সকালে নাশতায় সেদ্ধ ডিম খাওয়া সবচেয়ে উপকারী, কারণ এতে থাকা প্রোটিন ও ভিটামিন শরীরকে সারাদিন সতেজ, কর্মক্ষম ও শক্তিতে ভরপুর রাখে এবং শরীরের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। অনেক সময় দুপুরের খাবারের সঙ্গেও ডিম খাওয়া যায়, এতে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

তবে রাতে ঘুমানোর আগে ডিম খাওয়া ভাল বলেছেন ডাক্তারেরা। রাতে ডিম খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। ও শরীরের হাঁড় ও বুদ্ধি সঠিক রাখে। শিশুদের ক্ষেত্রে সকালে বা দুপুরে সেদ্ধ ডিম দেওয়া সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আবার যারা ব্যায়াম করেন, তারা ব্যায়ামের পর সেদ্ধ ডিম খেলে দ্রুত শক্তি ফিরে পান। সব মিলিয়ে ডিম খাওয়ার সেরা সময় হলো সকাল, আর দ্বিতীয় উপযুক্ত সময় দুপুরের খাবারের সাথে।

সিদ্ধ ডিম কি বাচ্চার জন্য ভালঃ

হ্যাঁ, সিদ্ধ ডিম বাচ্চার জন্য অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। সিদ্ধ ডিমে প্রচুর প্রোটিন,ভিটামিন এ, ডি, ই, বি-কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা শিশুর হাড় মজবুত করা, মস্তিষ্কের বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং শরীরকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। ভাজা বা কাঁচা ডিমের তুলনায় সিদ্ধ ডিম বেশি নিরাপদ, কারণ সিদ্ধ করার ফলে জীবাণু নষ্ট হয় এবং হজমও সহজ হয়।

শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে অল্প পরিমাণে সেদ্ধ কুসুম দিয়ে শুরু করা যায়। ধীরে ধীরে এক বছর বয়সের পর সাদা অংশও খাওয়ানো যেতে পারে। তবে প্রতিবারই ভালোভাবে সেদ্ধ করতে হবে, যাতে কোনো ব্যাকটেরিয়া থেকে না যায়। নিয়ম মেনে দিলে সিদ্ধ ডিম শিশুর জন্য সুস্থ ও সবল বৃদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ খাবার।

বাচ্চাদের জন্য ডিমের উপকারিতাঃ

বাচ্চাদের দেশি মুরগীর ডিম খাওয়ানো অবশ্যই ভাল। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন থাকে। যা বাচ্চাকে বেড়ে ওঠতে সাহায্য করে। বাচ্চাদের জন্য ডিম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উপকারী খাবার। এতে থাকা প্রোটিন শিশুর হাড়, দাঁত ও পেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিমে থাকা ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে যা হাড় ও দাঁতকে মজবুত করে। এছাড়া ডিমে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। ডিমে আয়রন থাকায় এটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে এবং শরীরকে শক্তি যোগায়।

প্রতিদিন সেদ্ধ ডিম খাওয়ালে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে তারা সহজে অসুস্থ হয় না। ডিম শিশুদের দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, যা তাদের পড়াশোনা ও খেলাধুলায় মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়ক। এছাড়া এতে থাকা প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স শরীরে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। তাই বাচ্চাদের নিয়মিত ডিম খাওয়ানো শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন শিশুদের শরীর সঠিক রাখার জন্য বাচ্চাদের কোন ডিম খাওয়ানো ভাল। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে বাচ্চাদের ডিম খাওয়ার নিয়ম কি।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন............... www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )








এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url